রম্য রচনা : প্রশ্নোত্তরে অর্থ
উত্তর : যাবতীয় অনর্থের মূল।
প্রশ্ন ২ : অর্থ কি খায় ?
উত্তর : মানুষের মাথা খায়।
প্রশ্ন ৩ : অর্থ কোন ' বাদে' বিশ্বাসী ?
উত্তর : ভোগবাদে।
প্রশ্ন ৪ : অর্থের সাথে মনের সম্পর্ক কি ?
উত্তর : ব্যাস্তানুপাতিক।
অর্থাৎ অর্থের পরিমাণ বাড়লে মনের
পরিমাণ কমে।
প্রশ্ন ৫ : অর্থের সাথে আভিজাত্যের সম্পর্ক কি ?
উত্তর : অর্থ ও মেকি আভিজাত্য সমানুপাতিক।
অর্থাৎ অর্থের পরিমাণ বাড়লে মেকি
আভিজাত্যও বাড়ে।তবে প্রকৃত
আভিজাত্যের সাথে এরূপ কোন সম্পর্ক
নেই।
প্রশ্ন ৬ : অর্থ দিয়ে কি সব কেনা যায় ?
উত্তর : না,অন্ততঃ ভালবাসা কেনা যায় না। তবে
অনেকেই ভুল করে ভালবাসার ছলনা কে
ভালবাসা ভেবে কেনে।
প্রশ্ন ৭ : ফাটকা অর্থ কি করে ?
উত্তর : লোভের সিঁড়িতে পা রাখতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৮ : স্থায়ী অৰ্থলাভের উপায় কি ?
উত্তর : কঠোর পরিশ্রম।
প্রশ্ন ৯ : অর্থের সীমাবদ্ধতা কি ?
উত্তর : পরপারে যাওয়ার সময় সাথে নিয়ে
যাওয়া যায় না।
প্রশ্ন ১০ : অর্থশাস্ত্র কি ?
উত্তর। : যে শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে লাভ,গুড় এবং
পিঁপড়ে সম্পর্কিত বিশদ ধ্যান ধারণা করা যায়।
প্রশ্ন ১১ : অর্থনীতি কি ?
উত্তর : যে সমস্ত নীতি অবলম্বন করে লাভের
গুড়কে পিঁপড়ের হাত থেকে বাঁচানোর
নানান ফন্দি ফিকিরের শুলুক সন্ধ্যান
পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ১২ : অর্থলাভ কিভাবে হয় ?
উত্তর : সবই কপাল দাদা,কি আর বলবো !
প্রশ্ন ১৩ : কোন কাজে অর্থ ব্যয় করা উচিত ?
উত্তর। : শুভ কাজে।
প্রশ্ন ১৪ ; অর্থ দান কাকে করবেন ?
উত্তর : সৎ পাত্রে।
প্রশ্ন ১৫ ,: অনর্থ কি?
উত্তর : অর্থের বিপরীত।
প্রশ্ন ১৬ : পৃথিবী কিসে চলে ?
উত্তর : অর্থে।
প্রশ্ন ১৭ : কিভাবে তা সম্ভব ?
উত্তর : অসম্ভব - ই বা কেন ? পেটের দু - মুঠো
জোগাড় করতেও অর্থ লাগে।পৃথিবী থেকে
মঙ্গলে 'কিউরিওসিটি' পাঠাতেও অর্থ
লাগে।
আবার পৃথিবীর ইংরেজি কি ?' আর্থ'
তাই তো! ,সন্ধি বিচ্ছেদের নিয়ম অনুযায়ী
অ -কার + অ -কার = আ - কার হয়।
তাহলে ' আর্থ ' ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো
এখন দেখা যাক। আর্থ= অ+অর্থ।
সুতরাং বাকী টা তো অর্থ -ই। তাই
না !
প্রশ্ন ১৮ :অর্থে কিসের গন্ধ থাকে ?
উত্তর : স্বার্থ গন্ধ।
স্বার্থ=স্ব +অৰ্থ
প্রশ্ন ১৯ : অঙ্কের সাথে অর্থের সম্পর্ক কি?
উত্তর : অংকে কাঁচা হলে অৰ্থ তো ফাঁকা হবেই।
প্রশ্ন ২০ : মানুষ অৰ্থ ঢালে কেন ?
উত্তর :সাধে কি ঢালে, বেশী কুড়ানোর তালে
থাকে।
প্রশ্ন ২১ : সেনসেক্স কি ?
উত্তর : অর্থনীতির সাথে বাইওলজিকে গুলিয়ে
ফেললে চলবে !
প্রশ্ন ২২ : অর্থের জন্য মানুষ কি করে ?
উত্তর : আকুলি - বিকুলি।
প্রশ্ন ২৩ : অর্থের স্বাদ কেমন ?
উত্তর : মধুর। কারো কারো মতে, ' Money is
honey' . উদাহরণ --- মধুচক্র।
প্রশ্ন ২৪ : কেচ্ছা - কেলেঙ্কারিতে কিসের গন্ধ থাকে ?
উত্তর : বেশির ভাগ কেলেঙ্কারিতে অর্থের গন্ধ থাকে।
তবে কেচ্ছাতে অর্থের গন্ধ নাও থাকতে
পারে।
প্রশ্ন ২৫ : সবচেয়ে বড় দাতা কারা ?
উত্তর। : কৃপনেরা কেননা তাদের জমানো অর্থের
বেশীর ভাগটাই নিজেরা ভোগ করে না।
ভোগ করে অন্য জনেরা।
প্রশ্ন ২৬ : অর্থের স্বপ্ন কি দেখা যায় ?
উত্তর : নিশ্চয়ই।লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে হলে
ছেঁড়া কাঁথায় শুতে হয়।এরচেয়ে বেশি অর্থের
স্বপ্ন দেখতে হলে কিসে শুতে হবে তা
অবশ্য জানা যায় নি।গবেষণা চলছে।
অদূর ভবিষ্যতে কোন না কোন
অৰ্থনীতিবিদ এটি আবিস্কার করবেন
এবং বহু অর্থমূল্যের একটি প্রাইজ
একগাল হাসি হেসে পকেটস্থ করবেন।
প্রশ্ন ২৭ : অৰ্থ কোথায় থাকতে ভালবাসে ?
উত্তর : স্পেশাল ইকোনোমিক জোনে।
প্রশ্ন ২৮ : অর্থের নিত্যতা সূত্র কি ?
উত্তর : অৰ্থ সৃষ্টি করাও যায় না ধ্বংস করাও
যায় না।এক হাত হইতে অন্য হাতে
স্থানান্তরিত হয় মাত্র। উদাহরণ ----- ব্যাংকে
যে অর্থমূল্যের ছেঁড়া নোট জমা দেওয়া
হয় তার সমমূল্যের ভালনোট পাওয়া
যায়।এক পয়সা বেশি বা কম পাওয়া
যায় না।
প্রশ্ন ২৯ : অর্থ সংরক্ষনের নিরাপদ স্থান কোথায় ?
উত্তর :শুনেছি, সুইস ব্যাংক।
প্রশ্ন ৩০ : অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা না করেও অর্থ
সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কোন পদে যাওয়া যায় ?
উত্তর : অৰ্থমন্ত্রী।
প্রশ্ন ৩১ : অর্থ বিনিয়োগ কিভাবে করা উচিত ?
উত্তর : ভেবে চিন্তে।
প্রশ্ন ৩২ : অর্থ সংক্রান্ত মামলায় কি করা উচিত ?
উত্তর : বোঝা পড়া।
প্রশ্ন ৩৩ : অর্থের সাথে প্রেমের সম্পর্ক কি ?
উত্তর : অর্থাভাবে প্রেম ছোটে।
প্রশ্ন ৩৪ : অর্থের সাথে মনের সম্পর্ক কি?
উত্তর : কেউ মন দিয়ে পণ নেয়।
কেউ পণ নিয়ে মন দেয়।
বুঝা বড় ভার !
প্রশ্ন ৩৫: অর্থ দিয়ে কি কি করা যায় ?
উত্তর : কি হয় না সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।মিটিং
হয়, ইটিং হয়,চিটিং হয়,চ্যাটিং হয়,ডেটিং
হয়,ভেটিং হয়,রেটিং হয়,বেটিং হয়,
কিডন্যাপিং হয় -----------
প্রশ্ন ৩৬ : অর্থের বিশেষ গুণ কি ?
উত্তর : হাতে আসতে যতক্ষণ যেতেও ততক্ষণ।
প্রশ্ন ৩৭ : অর্থ নিয়ে কি করা উচিত নয় ?
উত্তর : অহংকার।
প্রশ্ন ৩৮ : কেন অর্থ নিয়ে অহংকার করা উচিত নয় ?
উত্তর : অর্থ স্থায়ীভাবে কারও কাছে থাকা পছন্দ
করে না।
প্রশ্ন ৩৯ : অর্থ কার ?
উত্তর :যার পকেটে যখন থাকে অর্থ তখন তার।
প্রশ্ন ৪০ : আর্থিক সংকটে কি হয় ?
উত্তর। : উদ্বেগ বাড়ে।
প্রশ্ন ৪১ : সবচেয়ে কিসের দাম কম ?
উত্তর : কথার দাম। শুনেছি কেউ কথা রাখে নি।
প্রশ্ন ৪২ : কোন জিনিস কেনার আগে সবচেয়ে বেশি
নজর কোন দিকে দেওয়া উচিত ?
উত্তর : দাম পকেট ফ্রেন্ডলি কি না !
প্রশ্ন ৪৩ :মাথার দাম কার বেশি ?
উত্তর : সুনাগরিক সে সাধারণ মানুষই হোন বা
বুদ্ধিজীবীই হোন কখনো মাথার দামের
কথা খবরের কাগজে পড়িনি।শুধুমাত্র
অপরাধীদের মাথার দামই খবরের
কাগজে দেখা যায়। সেদিক দিয়ে বিচার
করলে একথা বলা যায় অপরাধীদের
মাথার দাম - ই বেশি।
প্রশ্ন ৪৪: বেশি অর্থ উপার্জন করতে হলে কি করতে
হবে ?
উত্তর ; ঘরে ঘরে ' Money Plant' লাগাতে হবে ?
প্রশ্ন ৪৫ : ,,এক্সপেন্স রেসিও কি ?
উত্তর : সব ব্যাপারে নাক না গোলানোই ভালো।যারা
কোটি কোটি টাকার মালিক তারায় ভাবুন।
প্রশ্ন ৪৬ : অর্থের রঙ কি ?
উত্তর : সাদা ও কালো । শুনেননি 'White Money' ও ' Black Money.
প্রশ্ন ৪৭ : Black Money উদ্ধার করা যায় না কেন ?
উত্তর : যার নেই সে ভাবে Black Money. কিন্তু
যার আছে সে তো Black Money ভাবছে
না।সমস্যাটা এইখানে। আমরা শিল্পপতি হই,
আমরা শিল্পী হই, আমরা ডাক্তার হই,
আমরা ইঞ্জিনিয়ার হই, আমরা নেতা হই,
আমরা অনেককিছুই হই কিন্তু আমরা হই
না। ছোট থেকেই নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে
যদি আমাদের মানুষের মত মানুষ মানুষ
করা হত তাহলে Black Money বলে কিছু
থাকতো না ,সব মানি White Money হয়ে
যেত।
প্রশ্ন ৪৮ : অর্থ কোন অবস্থায় থাকে ?
উত্তর : কঠিন, তরল, ও বায়বীয় তিন অবস্থাতেই
থাকে।কঠিন অবস্থায় অৰ্থকে বলে
হার্ড ক্যাশ। তরল অবস্থায় থাকলে বলে
লিকুইড মানি।বায়বীয় অবস্থা বুঝতে একটু
চোখকান খোলা রাখতে হবে।খানিকটা গ্যাস
বেলুনের মত।বেলুনে গ্যাস ভরলে উড়ে।
স্ফূর্তির মোড়কে টাকা রাখলেও উড়ে।
বায়বীয় না হলে টাকা উড়বে কেমনে ?
প্রশ্ন ৪৯ : টাকার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ?
উত্তর : ডলার কে টেক্কা দেওয়া।
প্রশ্ন ৫০ : টাকার ঐতিহাসিক ভুল কি ?
উত্তর : যার নেই তার কাছে যায় না,যার আছে তার
কাছে ভিড় জমায়।
------------------------
রচনা : ডঃ গৌতম কুমার মল্লিক
আমার এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ' ভূমিপুত্র' পত্রিকার বিশেষ সাহিত্য সংখ্যায়,২০১৩ সালে।
অপূর্ব সুন্দর লেখা।
ReplyDeleteভীষণ ভালো লাগলো
ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন।
Deleteদারুন
ReplyDeleteধন্যবাদ।
Delete