রম্য রচনা : আধুনিক বাস্তব ব্যাকরণ - এককথায় প্রকাশ




মাফ করবেন।ব্যাকরণ বিশেষজ্ঞ আমি নই।ব্যাকরণ নিয়ে দু- চার কথা বলবো এমন স্পর্ধা বা আস্পর্ধা কোনটাই আমার নেই।মনে পড়ে যায় স্কুলের কথা।আমি পড়তাম গড়বেতা হাইস্কুলে।আমাদের বাংলার শিক্ষক অবনীবাবু একবার আমাকে ' বিশেষজ্ঞ' শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাস বলতে বলেছিলেন।আমি বলেছিলাম ' যিনি বিশেষরূপে অজ্ঞ'।আমার কথা শুনে অবনীবাবুর মত রসিক মানুষও আমাকে আলতো ধমক দিয়েছিলেন।কিংবা উনি ইচ্ছে করলেই ' সর্বজ্ঞ' কথাটির ব্যাসবাক্যসহ সমাস ধরতে পারতেন।
কিন্তু ধরেন নি।খুব সম্ভবত আমি উত্তরে কি বলতে পারি সে সম্পর্কে আগাম একটা কিছু আঁচ করেই পিছু হটে যান।যাই হোক আমার ব্যাকরণ জ্ঞানের এটি একটি নমুনা মাত্ৰ।



তবে হ্যাঁ , আমি হলফ করে বলতে পারি বহু বাস্তব ঘটনার  মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা  আমাকে বাস্তব ব্যাকরণে  চোস্ত করেছে।হয়তো পাঠ্যপুস্তকে পড়া ব্যাকরণের সাথে মিল নেই বাস্তব ব্যাকরণের। তাতে কি ? বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতে মানুষ নিজে নিজেই কিছু জীবনের ব্যাকরণ শিখে যায়। একে যদি বাস্তব ব্যাকরণ বলি তাতে ভুল কি?
এখানে মূলত ' এককথায়'  প্রকাশের কিছু নমুনা পেশ করছি।আমার বাস্তব ব্যাকরনের সাথে  যদি পাঠ্যপুস্তকে পড়া ব্যাকরণের কোন মিল পেয়ে যান তবে জানবেন তা আমার দোষ নয়, তা আমার অজ্ঞতার।



হাপিত্যেশ ----হাঁফাতে  হাঁফাতেই শেষ।
পরামর্শ   ------- পরম সময়ে  বিমর্ষ।
বিদগ্ধ   -------- বিশেষরূপে দগ্ধ হইয়াছেন যিনি।
নেশাড়ী -------- নেশা করে যিনি ফিরেন বাড়ী।

হেফাজত ---------- হেফায়  পড়া  ইজ্জত।
সম্পত্তি ------------- যার কারণে সম্পর্কের বিপত্তি।
উত্তেজনা -------- উঠতে বসতে যন্ত্রণা।
কামনা ------------  কামানোর জন্য আনমনা।


মাফিয়া -------- সর্বস্ব  নিয়েও মাফ করেন না যিনি।
হোঁচট ----------  হাঁটুতে নয় পায়ে চোট।
পেস্ট -------- রোজ  আসা গেস্ট।
ঝামেলা --------  ঝামা  ঘষার মামলা।


দ্বারস্থ ---------- দ্বারে  দাঁড়িয়ে থ।
ফ্যাশন --------- ফাস্ট  চলার পথ অন্বেষণ।
গ্রেডেশন -------  গ্রেড  অনুযায়ী ডোনেশন।
জল্পনা ---------- জল  মিশানো  কল্পনা।


মোকাবিলা --------- মওকা  পেলে দেখাবো খেলা।
সম্ভাবনা ----------- সৎভাবের  উদভাবনা।
আচমকা -------- আঁচ  করার আগে চমকা।
তারকা --------- তারার মত চকচকা।

জটলা  -------- জট  লাগা  মামলা।
লড়াকু --------- লড়ার জন্য আকুপাকু।
রুপালী ------ রূপ আছে তাই এলি।
ট্যাকল  ------- টেকনিক্যালি হ্যাকল।


ডোবালো---–- :ডুব দিয়ে পালালো।
মাশুল -----  মানুষ গুনে করলে ভুল।
ধকল ----- ধক  আছে  তবে চল।
দুর্ভোগ ------ দুঃখ মিশানো ভোগ।


স্পর্শকাতর ----- স্পর্শে-ই কাতর হন যিনি।
সর্বশান্ত --------- সবকিছু হারিয়েও যিনি শান্ত।
আশংকা ------- আশার  স্বপ্নে  লংকা।
টোপর -------- টোপখানি মাথায় পর।


নেপোয় -------- কিছু নেই পেলে শোয়।
ভোজন ---- ভোজে আছে মজে  মন।
আদর ------- আলতো  করে  ধর।
তাজ্জব  ------  তাক  করা জব।


মাতাল ------ মাত  করে খেয়ে মাল।
গয়না -------- গা নয় আয়না।
নেকলেস ----- পরলে নেকে লাগে বেশ।
অত্যাচার ------- উঠতে  বসতে অনাচার।


আগমনী ---- আগমনে  মন উতলা এমনি এমনি।
ইনচার্জ ---- ইনার ঘাড়েই চেপেছে চার্জ।
শিহরণ ----- শির শির করে মন।
জুলুম ------ জ্বালাতে  এলুম।


---------------------------
রচনা : ডঃ গৌতম কুমার মল্লিক

বি : দ্রঃ
আমার লেখা এই রম্য রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে নিউজ কমিনিয়ন পত্রিকায়।

Comments

  1. আপনার দেওয়া কবিতাটি শব্দের ব্যাখ্যার মাধ্যমে এক অসাধারণ কাব্যিক সৃষ্টির উদাহরণ। এটি শুধু শব্দের অর্থ তুলে ধরে না, বরং শব্দের মাঝে লুকিয়ে থাকা রস ও ব্যঞ্জনাকে মজাদারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। কবির খেলাচ্ছলে শব্দের ভাঙা-গড়া ও ব্যাখ্যা দেওয়ার দক্ষতা প্রশংসার যোগ্য।

    কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে রয়েছে ব্যঙ্গাত্মক, রসিকতাপূর্ণ এবং গভীর ভাবনার সংমিশ্রণ। বিশেষ করে "উত্তেজনা — উঠতে বসতে যন্ত্রণা" বা "মাশুল — মানুষ গুনে করলে ভুল"— এসব লাইন শুধু অর্থপূর্ণই নয়, বরং জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে নতুনভাবে তুলে ধরে।

    এটি একদিকে ভাষার সৃজনশীল ব্যবহারের অনন্য দৃষ্টান্ত, অন্যদিকে পাঠকদের ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে। কবিতার মজার ছলে গভীর অর্থ প্রকাশের ক্ষমতা একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এ ধরনের সৃষ্টির জন্য কবিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই!

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

রম্য রচনা :এক ব্যস্ত মানুষের সাক্ষাৎকার

রম্য রচনা : এক আস্ত ভূতের সাক্ষাৎকার

রম্য রচনা : বিজ্ঞাপনের পাতা